কুকুর কামড় দিলে কি করবেন? টিকা দেয়া কি বাধ্যতামূলক? জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ কি?
আপনার কাছে যদি একটি মরণব্যাধি রোগের নাম জানতে চাওয়া হয়।আপনি হয়তো বলবেন,এইডস বা ক্যান্সার।হ্যাঁ ঠিক আছে,এইডস বা ক্যান্সার মরণব্যাধি,কিন্তু বর্তমান উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায় এই দুটি রোগও নিরাময় হয়।তবে যে রোগটি হলে শতভাগ মৃত্যু নিশ্চিত সেটি হলো রেভিস বা জলাতঙ্ক।এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার তিন থেকে পাঁচদিনের মধ্যে রোগী মারা যায়।এই রোগের কোনো চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।
সাধারণভাবে জলাতঙ্ক হয় কুকুরের কামড়ে।তাই কুকুর কামড় দিলে বেপারটাকে অতি গুরুত্বের সাথে দেখা উচিত।
জলাতঙ্ক রোগ কখন হয়?
স্বাভাবিকভাবে মানুষের মধ্যে জলাতঙ্ক রোগের জীবাণু আসে কুকুর,বিড়াল,শিয়াল,হায়েনা এসব প্রাণীর কামড়ের মাধ্যমে।তবে ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে কুকুরের কামড়ের মাধ্যমে।
কুকুর কামড় দিলেই এই রোগ হবে এমন না,যেসব কুকুর জলাতঙ্ক রোগের জীবাণু বহন করে সেসব কুকুর কামড় দিলে তাদের লালাতে থাকা জলাতঙ্কের জীবণু মানবদেহে প্রবেশ করে আর জলাতঙ্ক হয়।
জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ কি?
- জলাতঙ্ক রোগ হলে গলার মাংসপেশি সংকুচিত হয়ে যায়।প্রথমদিকে রোগীর প্রচুর পানি তৃষ্ণা লাগে,সে যখন পানি খেতে যায় তখন পানি গিলার সময় গলার মাংসপেশির(Muscles of deglutition) সংকোচনের কারণে প্রচন্ড ব্যাথা পায় এবং তখন থেকে পানির প্রতি ভয় ঢুকে যায়।পরবর্তীতে পানি দেখলে বা শুধু পানির শব্দ শুনলেও রোগী আতঙ্কে কুঁকড়ে উঠে এবং তার গলার মাংসপেশি সংকুচিত হতে থাকে।
- যেকোনো ধরনের শব্দ সহ্য করতে পারে না
- চোখে আলোও সহ্য করতে পারে না
জলাতঙ্ক রোগের জীবাণু নার্ভ বা স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে চলে যায় এবং রোগী কিছুদিনের মধ্যে পাগল হয়ে যায়,খিঁচুনি হয়,কিছুদিন কোমায় থাকে,অতঃপর মারা যায়।
কুকুর কামড় দিলে কি করবেন?
জলাতঙ্ক রোগ যদি একবার হয়ে যায় তবে সে রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত।প্রতিবছর প্রায় ৫৯ হাজার মানুষ মারা যায় জলাতঙ্ক রোগে।আর এ যাবৎকাল জলাতঙ্ক হয়েছে কিন্তু বেঁচে গেছে এমন রোগীর সংখ্যা মাত্র ০৩ জন। তবে রোগ হওয়ার আগেই কিছু ব্যবস্থা নিলে রোগ হওয়া থেকে আটকানো যায়।যেমন:
- কুকুর,বিড়াল শরীরের যে স্থানে কামড় দিয়েছে সে স্থান “Running Tape Water” বা প্রবহমান পানির ধারার নিচে নিয়ে সাবান দিয়ে ধুঁতে হবে কমপক্ষে পাঁচ মিনিট।
- ক্ষতস্থানে যত বেশি পরিমাণ সম্ভব তত পানি দিতে হবে।
- কামড়ের স্থান কিছুতেই ব্যান্ডেজ,কাপড় বা অন্য কিছু দিয়ে বাঁধা যাবে না।ক্ষতস্থান খোলা রাখতে হবে।
- ক্ষতস্থান সেলাই করা যাবে না,ক্ষতস্থান সেলাই করলে ভিতরে যদি জীবণু থেকে যায় তবে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
- জরুরি ভিত্তিতে নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে যেতে হবে ভ্যাক্সিন বা টিকা দেওয়ার জন্য।
জলাতঙ্কের টিকা কখন দিতে হয়?
- যে কুকুর বা বিড়াল কামড় দিয়েছে সে কুকুর বা বিড়াল যদি পাগল হয়।
- সেই কুকুর বা বিড়াল যদি অন্ধকারে বসে থাকে।
- কামড় দেওয়ার ১০ দিনের মধ্যে যদি কুকুর মারা যায়।
- কুকুরকে যদি খুঁজে পাওয়া না যায়।
- জংলি কুকুর,বিড়াল,শিয়াল,হায়েনা কামড় দিলে।
এই সিনারিওগুলো যদি ঘটে তবে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে এবং জলাতঙ্কের টিকা নিতে হবে।
কামড়ের উপর ভিত্তি করে টিকা
কামড় বা আঁচড়ের উপর ভিত্তি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকা নেওয়ার বেপারটাকে তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করেছে।
ক্যাটাগরি ০১ঃ খাবার খাওয়ানোর সময় বা অন্য কারণে,কুকুর বা বিড়াল যদি জিহ্বা দিয়ে চেটে দেয়,হালকা আঁচড় লাগে।
এক্ষেত্রে টিকা দেওয়ার দরকার নেই।পানি দিয়ে ক্ষতস্থান ধৌত করলেই হবে।
ক্যাটাগরি ০২ঃ কুকুরের কামড়ে যদি ক্ষত তৈরি হয় কিন্তু রক্ত বের না হয় এবং পরবর্তীতে কুকুর যদি দশদিনের ভিতর মারা যায় বা কুকুরের মাঝে জলাতঙ্কের লক্ষণ প্রকাশ পায় তখন জলাতঙ্কের টিকা দিতে হবে।
জলাতঙ্কের টিকা দিতে হয় ০ দিন মানে প্রথমদিন,০৩,০৭,১৪,২৭ তম দিন।
ক্যাটাগরি ০৩ঃ কুকুরের কামড়ে যদি গভীর ক্ষত তৈরি হয় এবং রক্ত বের হয়।
এক্ষেত্রে যতদ্রুত সম্ভব ইমিউনোগ্লোবিউলিন দিতে হবে,সাথে শিডিউলের সবগুলো টিকা দিতে হবে।
ভুল ধারণা
কুকুর,বিড়াল কামড় দিলে বা আঁচড় দিলে পেটে কুকুরের বা বিড়ালের বাচ্চা হয় এমন একটা হাস্যকর ধারণা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে।যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
কুকুর কামড় দেওয়ার পর পানি ধারা ভালোভাবে কামড়ের জায়গা ধৌত করা, পরবর্তীতে যথাসময়ে ইমিউনোগ্লোবিউলিন এবং টিকা দেওয়া এই দুটি কাজ জলাতঙ্ক রোগ হওয়া প্রতিরোধ করে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
ব্লগটি আপানার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন
-
Facebook
-
Linkedin
-
Whatsapp
-
Twitter