Testosterone | টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির উপায় - ৫ টি খাবার ও অভ্যাস
যে হরমোনের দাস পুরুষ
চিকন সুরে কথা বলা একটা বালক এগারো-বারো বছরের দিকে হঠাৎ করে তাগড়া গলায়,যুবকের মতো বলিষ্ঠ সুরে কথা বলা শুরু করে।সে নিজেই অবাক হয়,আশপাশের ছোটরা ভাবে ছেলেটা এভাবে পরিবর্তন হয়ে গেলো কেনো?আর বড়দের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো মুচকি হেসে মনে মনে বলে,ছেলেটা এবার পুরুষ হতে চললো।
এই বয়সকে বলে বয়ঃসন্ধিকাল।এই বয়সে একটা ছেলের বীর্য উৎপাদন শুরু হয়,এই বীর্য উৎপাদন থেকে শুরু করে মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ, গোপনাঙ্গ বড় হওয়া,গোঁফ-দাড়ি উঠা,বগলে ও তলপেটে লোম উঠা,কন্ঠ মোটা হওয়া,দেহের পেশির প্রসারণ এইসবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে পুরুষদের একটি হরমোন।যার নাম টেস্টোস্টেরণ।
টেস্টোস্টেরণ উৎপাদন কখন শুরু হয়?
আমরা অনেকেই মনে করি টেস্টোস্টেরণ হয়তো বয়ঃসন্ধিকালে উৎপাদন শুরু হয়।আসলে বেপারটা এমন নয়,মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় যখন বয়স হয় মাত্র সাত সপ্তাহ তখন থেকেই এই হরমোন উৎপাদন শুরু হয়।ভ্রুণ অবস্থায় ছেলেদের গোপনাঙ্গ তৈরি শুরু হয় এই হরমোনের প্রভাবেই।
তবে এ কথা সত্য বয়ঃসন্ধিকালে টেস্টোস্টেরণের পরিমাণ খুব বেড়ে যায়।যেমন,জন্মের পর ১-৫ বছর বয়সে টেস্টোস্টেরণের স্বাভাবিক মাত্রা থাকে ১২ ng/dl আর ৬-১০ বছর বয়সে ২৫ ng/dl, আর ১১ বছর বয়সে বয়ঃসন্ধিকালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩০ ng/dl, ১৮ বছর পর তা বাড়ে ১০১০ ng/dl পর্যন্ত।৩০ বছর বয়স পর্যন্ত সাধারণত তা প্রায় ১০১০ ng/dl এর কাছাকাছিই থাকে,কিন্তু ত্রিশ বছরের পর টেস্টোস্টেরণের মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
তাছাড়া বিভিন্ন কারণে পুষ্টিহীনতা বা বদঅভ্যেসগত কারণে ত্রিশ বছরের আগেও টেস্টোস্টেরণের মাত্রা কমে যেতে পারে।এখন কথা হচ্ছে টেস্টোস্টেরণের মাত্রা কমে গেলে কি করবেন,মানে বাড়াবেন কিভাবে?
শরীরের কোনোকিছু বাড়ানোর কথা উঠলেই আমরা ভাবি খাবার খেয়ে বাড়িয়ে ফেলবো।হ্যাঁ খাবার খেয়ে বাড়ানো যাবে, কিন্তু লাইফস্টাইল ঠিক না রাখলে খাবার তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না।
তাহলে টেস্টোস্টেরণ বাড়ানোর জন্য প্রথমে আমরা সঠিক লাইফস্টাইল সম্পর্কে জানবো, তারপর পাঁচটি খাবার সম্পর্কে জানবো, যেগুলো নিয়মিত খেলে টেস্টোস্টেরণের মাত্রা বাড়বেই।
টেস্টোস্টেরণ বাড়াতে লাইফস্টাইল মডিফিকেশন
১.ওজন নিয়ন্ত্রণ
শরীরে মাত্রাতিরিক্ত চর্বি আর ইয়া বড় একটা ভুড়ির কারণে টেস্টোস্টেরণ ক্ষরণের মাত্রা বিপুল হ্রাস পায়।অতএব,টেস্টোস্টেরণের মাত্রা বাড়াতে হলে ওজন অবশ্যই কমাতে হবে। BMI অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর ওজনের লিমিটে ওজন রাখুন। BMI কি জানতে হলে এই লিংক এ চলে যান
২.নেশা থেকে দূরে থাকুন
আপনার যদি ধূমপান বা মদ খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে সাবধান হয়ে যান।কারণ এইসব তামাকজাত দ্রব্য টেস্টোস্টেরণ ক্ষরণ কমিয়ে দেয়।এখন আপনি ভেবে দেখুন আপনার পুরুষত্ব স্ট্রং রাখা বা বউকে খুশি রাখা আপনার কাছে জরুরি নাকি ছাইপাঁশ খেয়ে মাতাল হয়ে টেস্টোস্টেরণের বারোটা বাজানো আপনার কাছে জরুরি।যেটা জরুরি মনে হয় সেটাই করুণ।
৩.মনকে ফুরফুরে রাখুন
মনের উপর যত চাপ পড়ে টেস্টোস্টেরণ ক্ষরণ তত কমে যায়।যৌনজীবনে সুখী হতে হলে মনকে ফুরফুরে রাখতেই হবে।মনকে খুশী রাখতে কাজের মধ্যে বিরতি দিতে পারেন,বিশ্রাম নিতে পারেন।শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলেও এই হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়।সুতরাং প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম অতি জরুরি।
আবার ভারী শরীরচর্চা এই হরমোনের ক্ষরণ বাড়ানোতে সাহায্য করে।অতএব সম্ভব হলে ভারী শরীরচর্চা করুন।
এই পর্যায়ে সেই কাঙ্ক্ষিত পাঁচটি খাবার সম্পর্কে জেনে নিবো যা টেস্টোস্টেরণের মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
১.রসুন
রসুনে থাকে ‘আলিসিন’ নামক একটি যৌগ।এই যৌগ মানসিক চাপ বৃদ্ধিতে যে হরমোন দায়ী সেটি কমাতে সাহায্য করে।আর আমরা আগেই জেনেছি মানসিক চাপ কমলে টেস্টোস্টেরণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
আর কিভাবে রসুন খেলে চাপাভাঙা দূর হবে সেটি জানতে হলে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন -“গালে মাংস বৃদ্ধির উপায়“।
২.মধু
মধুতে একটি উপাদান থাকে যার নাম বোরন।এই বোরণ টেস্টোস্টেরণ ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। এই বোরন আবার নাইট্রিক অক্সাইডও বৃদ্ধি করে যা ধমনী সম্প্রসারণ করে লিঙ্গে রক্ত সঞ্চালন ঠিক রেখে লিঙ্গ উত্থানে শক্তি সঞ্চার করে।
৩.ডিম
এতোক্ষণ কি এই খাবারটির জন্যই অপেক্ষা করছিলেন?আমাদের জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য খাবার হচ্ছে ডিম।এই ডিমে থাকে প্রোটিণ,ওমেগা থ্রী,ভিটামিন ডি,কোলেস্টেরল,স্যাচুরেটেড ফ্যাট।এসব উপাদান টেস্টোস্টেরণ উৎপাদনের জন্য জরুরি।
০৪.কলা
কলাতে থাকে ব্রোমেলেইন এনজাইম।এই এনজাইম টেস্টোস্টেরণের নিঃসরণ বৃদ্ধি করে।তাছাড়া দেহে দীর্ঘক্ষণ শক্তি সরবরাহে কলার কোনো তুলনা নেই।
০৫.টকফল
টকফল শুনে হয়তো অনেকে আঁতকে উঠেছেন।বলে কি আমরাতো জানতাম টকফল খেলে পুরুষের যৌনতাই সমস্যা হয়!আসলে এটি ভুল ধারণা।টকফলে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন “সি” আর ভিটামিন “এ”। ভিটামিন ” এ” টেস্টোস্টেরণ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন হয়।
এই পাঁচটি খাবার নিয়মিত পরিমাণমতো খেতে পাড়লে টেস্টোস্টেরণের নিঃসরণ বৃদ্ধি পাবে নিশ্চিতভাবে।ওহ্ হ্যাঁ,তার সাথে সাথে উপরে বলা লাইফস্টাইলগুলোও মেইনটেইন করে চলতে হবে।
এক হাতে যেমন তালি বাজে না,ঠিক তেমন খাবার আর লাইফস্টাইলের সামঞ্জস্য না হলে সু স্বাস্থ্য কোনোদিনই পাওয়া যাবে না।
ধন্যবাদ।
লিখেছেন
ব্লগটি আপানার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন
-
Facebook
-
Linkedin
-
Whatsapp
-
Twitter
Leave a Reply