হাই প্রেসার কি | হাই প্রেসার হওয়ার কারণ | লক্ষণ কি কি | হাই প্রেসার হলে কি করবেন - কি খাবেন, খাবেন না

হাই প্রেসার কি? এর লক্ষ্মণ কি কি? হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গেলে কি করবেন? কি খাবার খাওয়া নিষেধ

হাইপারটেনশন যা লোকমুখে “হাই প্রেসার” বলে পরিচিত বাংলায় যাকে  উচ্চ রক্তচাপ বলে,যা একটি নিরব ঘাতক।নিরব ঘাতক এই জন্যই যে বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে হাইপারটেনশের কোনো লক্ষণই প্রকাশ পায় না।অথচ তা ধীরে ধীরে দেহের বিভিন্ন স্বাভাবিক কার্যক্রমের ক্ষতিসাধন করতে থাকে।স্ট্রোক আর হার্ট এট্যাক হওয়ার একটা প্রধাণ কারণ এই হাই প্রেসার।

হাই প্রেসার কি?

আমাদের দেহের হৃদপিণ্ডের ধমনীর স্বাভাবিক ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮০ মিলিমিটার মার্কারি।আর সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ মিলিমিটার মার্কারি।এখন কোনো কারণে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ যদি ৯০ মিলিমিটার মার্কারি বা তার থেকে বেশি হয় আর সিস্টোলিক রক্তচাপ যদি ১৪০ মিলিমিটার মার্কারির থেকে বেশি হয় তখন তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার বলে।

এখানে একটা বিষয় লক্ষনীয় যে দৌড়াদৌড়ি বা প্রচুর পরিশ্রমের কাজ করার পর রক্তচাপ অনেক বেড়ে যায় সেই সময়ে রক্তচাপ পরিমাপ করে, প্রেসার ৯০/১৪০ এর বেশি পেলে সেটাকে উচ্চরক্তচাপ বলা যাবে না।

হাই প্রেসার হলে কি কি সমস্যা তৈরি হয়

হার্টের রক্তনালির ভিতর অত্যাধিক চাপ থাকার কারণে তা রক্তনালির ক্ষতি সাধন করতে পারে।রক্তচাপ যত বাড়তে থাকবে তা তত নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাবে এবং রক্তনালিকে আরও বেশি ড্যামেজ করবে।তাছাড়া আরও কিছু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন:

  • স্ট্রোক 
  • হার্ট এট্যাক
  • চোখের সমস্যা,এমনকি অন্ধও হয়ে যেতে পারে
  • কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়া
  • স্মৃতিশক্তি এবং বুঝার ক্ষমতা কমে যাওয়া

হাই প্রেসার হওয়ার কারণ

  • বয়স যদি ৪০ এর বেশি হয় তখন উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়
  • পরিবারের কারো উচ্চরক্তচাপ থাকলে,বংশগত কারণ
  • অতিরিক্ত ওজন,স্থুলতা
  • শারীরিকভাবে কর্মক্ষম না থাকা
  • লবণ বেশি খাওয়া
  • অ্যালকোহল সেবন করা

হাই প্রেসারের লক্ষণ কি কি?

আগেই বলেছি,স্বাভাবিকভাবে উচ্চরক্তচাপের কোনো সুনির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে না।তবে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হাই প্রেসারের কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন:

  • মাথাব্যাথা,মাথা গরম হয়ে যাওয়া এবং মাথা ঘুরানো
  • বুকে ব্যাথা
  • ঘাড় ব্যাথা
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • চোখে ঝাপসা দেখা 
  • দুঃশ্চিন্তা
  • নাক দিয়ে রক্ত পড়া
  • মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া।

কারো যদি এসব  লক্ষণ থাকে,তবে খুব শীগ্রই রক্তচাপ মেপে নিশ্চিত হওয়া উচিত যে তার উচ্চরক্তচাপ আছে কিনা।

হাই প্রেসার হলে কি করবেন

জীবন যাপনের পরিবর্তন করতে পারলে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।কিছু বিষয়ের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। যেমন:

  • খাবারে লবণের পরিমাণ একদম কমিয়ে দিতে হবে
  • ধূমপান বা মদ্যপান পরিহার করতে হবে
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
  • নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে
  • দুশ্চিন্তা কম করতে হবে

কি খাবেন

  • তাজা ফল হাই প্রেসারের রোগীর জন্য সবচেয়ে উপকারি।যেমন,লেবু, জাম্বুরা, পেয়ারা, আমলকী, আপেল, কমলা, মাল্টা, কলা, পেঁপে।
  • শাকসবজি অবশ্যই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকতে হবে।যেমন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, শসা, মুলা, লাউ, মটরশুঁটি, ঢ্যাঁড়স, বেগুন, কুমড়া,পালংশাক, কলমিশাক, মুলাশাক, পাটশাক ইত্যাদি।

কি খাবেন না

  • মাংস,বিশেষ করে রেড মিট বা লাল মাংস,যেমন গরুর মাংস,খাসির মাংস খাওয়া যাবে না
  • ডিমের কুসুম খাওয়া যাবে না
  • মাখন বা তেলে ভাজা খাবার খাওয়া যাবে না,যেমন কেক, পেস্ট্রি, পরোটা, লুচি
  • আগেই বলে়ছি লবণযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না।টেস্টিং সল্ট, বিট লবণ ও অন্যান্য মুখরোচক লবণ খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে
  • সয়া সস খাওয়া যাবে না
  • চাটনি, ভর্তা ও আচারে অনেক তেল ও লবণ ব্যবহার করা হয়, যা হাই প্রেসারের রোগীর জন্য ক্ষতিকর

হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে কি করবেন

সুস্থ ব্যক্তির হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে যদি শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়, মাথা আর কপাল গরম হয়ে যায়,শ্বাস দ্রুত ফেলতে থাকে,কথা বলতে গেলে শ্বাস কষ্ট হয়,কাঁপুনি উঠে তখন,

  • প্রথমেই থাকে ধীরস্থিরভাবে বসাতে হবে, বিশ্রাম দিতে হবে।আর শুয়ানোর ক্ষেত্রে মাথাটা  বালিশ দিয়ে একটু উঁচুতে রাখতে হবে দেহ থেকে
  • মাথায় প্রচুর পানি ঢালতে হবে বা বরফ দিতে হবে 
  • ফল খাওয়ানো যেতে পারে,যেমন ফলের রস,তেঁতুলের শরবত ইত্যাদি খাওয়ানো যেতে পারে
  • সর্বোপরি কথা হচ্ছে,চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতে হবে যতদ্রুত সম্ভব

বিশেষ কিছু কথা

হাই প্রেসারের কারণে স্ট্রোক হয়ে বা হার্ট এট্যাক হয়ে প্রচুর মানুষ প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে।এর প্রথম কারণ তারা সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা পায় না,অনেককে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার আগেই রোগী মারা যায়।

এই দুর্ঘটনা এড়াতে চাইলে হাই প্রেসার আছে কিনা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে এবং জীবনযাপনের রীতি পরিবর্তন করতে হবে।

লিখেছেন
Shaon Ashraf
শাওন আশরাফ -এমবিবিএস মেডিকেল স্টুডেন্ট,ঢাকা,বাংলাদেশ -স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আর্টিকেল লেখক -ইউটিউবার -ব্লগার
ব্লগটি আপানার পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুরূপ ব্লগ
পাওয়া যায়নি